মায়ের কোলে শিশু ঈসী-র বাক্যালাপ
অতঃপর মরিয়ম আ.-এর উপর দোষারােপ বাড়তে থাকলে এক পর্যায়ে তিনি কোলের শিশুর দিকে ইশারা করলেন (অর্থাৎ শিশুর সাথে কথা বলুন সবাই!)
তখন জাতি বলল- কোলের শিশুর সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?
তখন-ই শিশু ঈসা বলতে লাগলেন- “আমি তাে আল্লাহর বান্দা (দাম)।
তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন।
আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন।
তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে এবং জননীর অনুগত থাকতে এবং আমাকে তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য করেননি।
আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি,
যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উখিত হব।” (সূরা মারিয়াম ২৮-৩৩)
উল্লেখ্য- ঈসা নিজেকে আল্লাহর দাস বলেছেন; পুত্র নয়।
কারণ, আল্লাহর। কোন শরীক নেই। কোন সাথী বা পুত্র গ্রহণ থেকে তিনি পবিত্র।
পবিত্র সেই সত্তা, যিনি প্রতিটি বস্তুকে যথাযথ স্থানে রেখেছেন, মানুষকে সৎ-পথ দেখিয়েছেন। হ্যাঁ..! এই হচ্ছে প্রকৃত ঈসা আ.।
আল্লাহ পাক বলেন- “এই হচ্ছে মারিয়ামের পুত্র ঈমা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লােকেরা বিতর্ক করে।
আল্লাহ এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি পবিত্র ও মহিমাময় সন্তা,
তিনি যখন কোন কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই বলেনঃ হও এবং তা হয়ে যায়।” (সূরা মারিয়াম ৩৪-৩৫)
অপর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন- “নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত
হচ্ছে আদমের-ই মতাে।
তাকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেল।” (সূরা আলে ইমরান-৫৯)
ঈসা আ.কে আল্লাহ পাক মহা নেয়ামত দান করেছেন। এরশাদ করেছেন- “স্মরণ করুন! যখন আল্লাহ বলবেন- হে ঈসা ইবনে মরিয়ম!
তােমার প্রতি ও তােমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন আমি তােমাকে পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য করেছি।
তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে কোলে থাকতেও এবং পরিণত বয়সেও এবং যখন আমি তােমাকে গ্রন্থ, প্রগাঢ় জ্ঞান,
তওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছি এবং যখন তুমি কাদামাটি দিয়ে পাখীর প্রতিকৃতির মত প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে আমার আদেশে,
অতঃপর তুমি তাতে ফু দিতে; ফলে তা আমার আদেশে পাখী হয়ে যেত এবং
তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরােগীকে নিরাময় করে দিতে এবং যখন আমি বনী
-ইসরাঈলকে তােমা- থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম
, যখন তুমি তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফের ছিল, তারা বলল- এটা প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছুই নয়।
আর যখন আমি হাওয়ারী (ঈমা সঙ্গী)দের মনে জাগ্রত করলাম যে,
আমার প্রতি এবং আমার রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তখন তারা বলতে লাগল,
আমরা বিশ্বাস স্থাপন করলাম এবং আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আনুগত্যশীল।” (সূরা মায়েদা ১১০-১১১)
শেষনবী মুহাম্মদ সা. সম্পর্কেও ঈসা আ. ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন।
আল্লাহ পাক বলেন- “স্মরণ কর! যখন মরিয়ম-তনয় ঈমা বলল-
হে বনী ইমরাইল। আমি তােমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।
আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদদাতা,
যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ।
অতঃপর যখন সে স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল- এ তাে এক প্রকাশ্য যাদু!” (সূরা সাফ-৬)
সুতরাং ঈসা আ. হচ্ছেন বনি ইসরাইলের উদ্দেশ্যে প্রেরিত নবী।
তিনি সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা.এর ব্যাপারে সুসংবাদ দিয়ে গিয়েছিলেন। চেনার সুবিধার্থে এমনকি নাম ও গুণাগুণ পর্যন্ত বর্ণনা করেছিলেন।
আল্লাহ পাক বলেন- “সেসমস্ত লােক, যার আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী,
যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন
অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং
তাদের উপর থেকে সে বােঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল।
সুতরাং যেসব লােক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং
সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্যে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।” (সূরা আরাফ-১৫৭)
No comments:
Post a Comment